Friday, November 14, 2014

কবিতাবাজি

রীতিমত পত্র পঞ্জিকা ঘেটে বাবা কাকা মা মরা ছেলের নাম রেখেছিল কাব্য মোহন । বাবার নিজের কবিতার ভূতের আসর ছিল, তবে কাব্য মোহনের কবিতায় মোহ ছিল না। তবে বাবা মরার আগের কথা রক্ষা করার জন্যে কাব্য মোহন নতুন করে কবিতা লেখার অনুশীলন শুরু করল, যাকে বলা যায় কঠিন অধ্যাবসয় ।
বললেই তো হয় না, কবিতা তো আর গঙ্গার জল না, মা স্বরসতীর আশির্বাদ সাথে নিজের উপরের খুপড়িতে উর্বরতা দুটোরই প্রয়োজন । কাব্য মোহন রাত জাগল, দিনে সূর্যের প্রখর তাপে ঘেমে নেয়ে হরেক পদের পাখিদের সাংসারিক, সামাজিক আলাপ শুনল তবে কবিতার ডাক শুনতে পেল না । তার এ অধ্যাবসয়ে বিরক্ত বিজ্ঞজন মতামত দিল ভ্রমণে বের হতে । ভ্রমণে বাড়ে অভিজ্ঞতা, আর তাতে অভিজ্ঞান হয়ত কবিতাও মিলে যেতে পারে ।

কাব্য মোহন ঘর ছাড়ল অভি্যাত্রীর বেশে, কবিতার খোজে ।

মাঠ দেখল, ডোবা দেখল, নদী নালা পুকুর, সরু সরল জটিল গরল সব প্রকার রাস্তাতে হাটল সে । রাত কাটাল জঙ্গলে পেচা পেচানীর হাতুম হুতুম প্যাচ-প্যাচানী শুনে ।  নেকড়ে নেকড়ীর খেকানি, শেয়াল শেয়ালীর চিল্লানী ... আহা অভিজ্ঞতা বাড়ল বটে কাব্য মোহনের, সব সংসারে পুরুষ নির্জাতনের । জঙ্গল ছাড়ল কাব্য মোহন । চলতে গিয়ে হাত ছড়ল পা ছিলে গেল । বনের লতা পাতা রাস্তার ধারের গাছের ছাল বাকল ঔষধ বানাতে বানাতে প্রায় কবিরাজ হয়ে গেল কাব্য মোহন, তবে কবি হতে পারল না এতদিনেও ।

কোন এক শহরের শুড়িখানার মাতাল একদিন বোঝাল, ভায়া কবিতা এমনি এমনি আসে না , ভেতর থেকে আসতে দাও আর সিদ্ধি ছাড়া কি সাধনা সম্পুর্ণ হয় নাকি ?

ব্যাস । পরের দিন থেকে কাব্য মোহন মাল্টিকালার ভাতের বদলে কাগজ তিনবেলা আর পানির প্রয়োজন কালি দিয়ে মেটান শুরু করল , আর সাধনার আবশ্যক উপাদান সিদ্ধি সকাল বিকাল কল্কের ফুটোতে ফটফট তামাক পোড়ান । মাতাল পিঠ চাপড়াল এবার হবেই ভায়া ।

কাব্য মোহন সসঙ্কোচে জিগ্যেস করে, তুমি নিশ্চিত দাদা ?

মাতাল কল্কের উদর চেপে পেছন দিকে সটানে টকটকে লাল চোখে জোর গলায় বলে গেল, আলবত হবে ভায়া !

কাব্য মোহন নিশ্চিত হতে না পারলেও তার উদরে যেন মেঘের ডাক আর বজ্রের ঝলকানি ।হবেই বা না কেন ? সাদা কাল মন্দ ভাল হরেক পদের কাগজ কালি তো বসে নেই, তারা যে কবিতা পাকাচ্ছে অন্দরে । দিনে দিনে সাধনা জোর হয়, আর মোহন হয় কমজোর ।

বেলা শেষে মোহনের উদরযন্ত্র উদারময়ের স্মরনাপন্ন হল । আর মোহন গেল হাসপাতালে । উপরে যম নিচে ডাক্তার মাঝে কাব্য মোহন । সাপ লুডু বল আর দড়ি টানাটানি, মোহন এপারে থাকল । এ যাত্রা কাব্য মোহন টিকে গেল ।

ঘরে ফিরে মোহন ঘোষণা দিল, ঢের হয়েছে । নিকুচি করি বাবার পিতিজ্ঞের, অনেক হয়েছে কবতেবাজি । গঙ্গায় গিয়ে কাব্য মোহন বাবার অসুখী আত্মার পিন্ডি দিল, ডুব দিল জলে আর গুণে গুণে দুইটা জিনিস ত্যাগ করল গঙ্গাতেই ।

নিজের নামের থেকে কাব্য আর মাথা থেকে কবিতার ভূত ।