Wednesday, April 9, 2014

অসমাপ্ত গল্প

সকালের ভেদাভেদ আছে । ঝকঝকে রোদের তপ্ত বর্ষা জানালার ফাক দিয়ে এসে তাতিয়ে যাচ্ছে । সকাল হয়েছে বোঝার জন্যে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। আমার এই এক ফালি রুমে আর কিছু না হোক রোদ বৃষ্টি তুষারপাত স্পষ্ট বোঝা যায় । মনে হয় কিছু জিনিস বাঙালি রক্তের বল আর ইন্টুউশনাল কোন কিছু জানি না এমনিই হয়ে যায় এদের । মাথার দিকে বড় কাচের জানালা । আমার এক ফালি নিজস্ব আকাশ । পিটপিট করে চেয়ে দেখলাম সাতটা বাজে । বিলেতি সাহেবরা এতক্ষণে জগিং সেরে ব্রেকফাস্ট করে পেপারে মুখ ডুবিয়েছে , কেবল বয়সীরাই । আমার মত দৌড় ভাগা ব্যাক্তি বর্গ হয়ত উঠে নিজের জন্যে বউ বাচ্চার জন্যে ব্রেকফাস্ট বানায় ফেলছে । ব্রাশ করতে করতে সকালের ফিলিংস্টা নিতে শুরু করলাম ।

দুই এক্কে দুই, দুই দুগুনে চার । এখন তো কেউ নামতা পড়ে না । স্মার্ট জামানা কিনা । পয়দা হতেই সব জেনে আসে, বর্ণ ফর ইন্টারনেটের যুগ । কথাটা মনে আসর কারন আছে । কমোডে বসে নিচ তলার ফ্ল্যাটের সদ্যজাত বাচ্চার কান্নার মিউ মিউ কানে আসছে । হে হে হে র‍্যাপ এর মত শোনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে । মি ই ইউ ইউ ইউ মি ইউ ইউ… ফ্ল্যাশ ছেড়ে দিলাম । ড্রামের আওয়াজে পরিষ্কার করে নিয়ে গেল পানি । বাচ্চার আওয়াজ কানে আসতেছে না , বিলাতে মা মনে হয় মুখে ফিডার ভরে চুপ করাই দিছে । পরচর্চা করা নিন্দনীয়, মনের ভেতর থেকে গাইয়া মাষ্টার মনে করিয়ে দিল । একদিন এই মাষ্টার বেটার সাথে বৈঠক করা লাগবে, বেটা যখন তখন হুট করে এন্ট্রি মেরে বসে ।

হাতে হেলমেটটা নিয়ে গ্যরাজে ঢুকলাম ।  এই একটা জিনিস মজা পাই আমি বরাবর, দামি ঝা চকচকে গাড়ীগুলার পাশে আমার ক্যননডেল সি এ ডি এক্স বাইসাইকেল সগৌরবে দাড়ীয়ে আছে । বুকের কাছে হেলমেট ধরে খানিক ওটার সিটে হাত বুলিয়ে নিলাম । আমার কাছে মনে হয় এটা আমার সযত্নে পালা ঘোড়া ,পিঠে ওঠার আগে স্যাডলে হাত বুলিয়ে নিলাম আর কি ! রোদে বের হলে এটার সিলভার মেটাল বডি থেকে কেমন জানি রোদ ঠিকরে বের হয় ।

চিড়বিড় করে উঠল টি শার্টের নিচে বাদামী ত্বক । বাংলাদেশী বর্ষাকাল আর ইউরোপের শীতকাল আমার দু চক্ষের বিষ । এখন যেটা চলে, বেশ ভাল লাগে । সেলুলারটা দুই হাত পা তুলে পকেটে নাচা নাচি করতেছে । সাইড করে দাঁড়িয়ে গেলাম, বের করে দেখি নিকিতা ।

- ইয়াপ নিক

সুন্দর রুশীটানে নিকিতা বলে গেল কিছু ইন্সট্রাকশন । মায়ামায়া ঢং আছে এই মহিলার কন্ঠে ।

- ওকে ।

এমনিতে অফিসের সবাই আমাকে জানে স্বল্প বাকের মানুষ, আদতে আমার এদের সাথে কথা বলতে কেমন জানি লাগে তাই বলি না । ভাবনা করার মত কিছু না । প্রজেক্ট চিফ খুজতেছেন । ঘড়ি দেখে মনে হল পিপড়ার মত গুটি গুটি বাকাচোরা ঠ্যাঙে সময় দোড়াচ্ছে । ওকে তো বললাম কিন্তু কতখন লাগবে কে জানে।

অফিসে ঢুক্তেই পেন্সিল চাবাতে চাবাতে হাফ চাইনিজ চিন হাই দিল । ওর পুরা নাম জিয়াং লি চিন । আমি নাম দিসি চিজ । মখমলের মত চামড়া, হলদেটে ফর্শা, কালো মণির অধিকারী চিন। ওর মাথা বটে একটা যেকোনো পুরুষের ঈর্ষার যোগ্য । কাচের দরজা ঠেলে ঢুকে মর্নিং বলে আমার বিলেতি বসেকে সম্ভাষণ দিলাম । আদেও এই বেটা মর্নিং এর মানে বঝে কিনা সন্দেহ । না আসলে ঘুমাই কম শুনেছি, ঘুমের মধ্যে বেচারা এপ এর বাগ বের করে বলে মিথ আছে ।

= মর্নিং আমিন ।

আমার নাম আমিন আহমেদ । বিলেতিরা আমার নাম ধ্বংস করার আগে আমি বলে দিসি আমারে আমেড বলে ডাক আমি পছন্দ করি না । বস কিছু বলার আগেই বললাম নিক আমাকে জানিয়েছে , জাস্ট আধা ঘন্টা দিতে হবে প্রিপারেশন এর জন্যে ।

= ওকে সান রক দ্যা ফ্লোর । চোখ টিপে দিল সাদা চামড়া ম্যানফ্রেড প্লিটারস্কি ।

কপাল আমার মন্দ বলিয়াছেন নিত্যানন্দ । মনে চাইতেছে এক কাপ মিষ্টি কফি । বানায় খাওয়া লাগবে , দরকার নাই ,৩০ মিনিটের মধ্যে একটা প্রেজেন্টশন এর জন্যে ফ্লোচার্ট, স্লাইড ইত্যাদি ইত্যাদি বানান লাগবে । আমার ডেস্কে বসে যেড আকারের পেপারওয়েটখানা সরিয়ে বসলাম । ডুব দিলাম কাজে । মিনিট পনের পরে সামনে তাকিয়ে দেখি নিকিতা । মিষ্টি হাসি দিলাম । ও দেখি সাদা লাল হরেক রঙের ডিজাইনের মগে কফি নিয়ে এসেছে । দুই কাপ ; আমার দিকে একটা বাড়িয়ে দিল ।

- থ্যাঙ্কস নিক মুয়াহ । একটা উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিলাম । ব্যাপারটা দেখে ছেলে মানুষের মত খিল খিল করে হেসে দিল চল্লিশোর্ধ নিকিতা । নিঃসঙ্গ থাকে ও । তবে ওর পড়াশোনার গতি প্লাস ধারনা করার গতি এত দ্রুত, যাকে বলে তাক লাগান । ও কফির কাপ দিয়ে চলে গেল, কারন আমি কথা বলি এমনিতেই কম তার উপরে ব্যাস্ত ।

কাজ শেষ করে দেখি পাশের ডেস্কের সহকর্মী লুইস হবস হাজির , ব্যাটা স্প্যানিশ । হবস কে বললাম মিটিং এর কথা । চিবিয়ে চিবিয়ে থাঙ্কস দিল । বুঝলাম রাতের হাঙ্গভার কাটে নাই ওর ।